মৌলিক বাংলা’র বিধিমালা এবং গঠনতন্ত্র

প্রস্তাবনা:

বাংলাদেশ; হাজার বছরের ক্রমবিকাশমান গ্রাম বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্কৃতির ধারক, ভাষার জন্য জীবন দানের মাধ্যমে যার জাতি স্বত্বার উন্মেষ, হাজার বছরের সংস্কৃতিকে ধারন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ, আমরা সেই বাংলা মায়ের গর্বিত সন্তান।

আমরা বাংলাদেশকে একটি আত্মনিয়ন্ত্রিত, শোষনহীন, সমৃদ্ধ ও জনগণের শাসনাধীন কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে আমাদের অঙ্গীকার ঘোষনা করছি।

বৈষম্যহীনতা, শোষনহীনতা, সমঅধিকার ও ন্যায়বিচারভিত্তিক এবং সর্বপরি লিঙ্গ, ধর্ম, জাতি, বর্ণ ও গোষ্ঠী নির্বিশেষে জনগণের শাসনে একটি জনগণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের কর্তব্যকে প্রধান করে স্বদেশী শক্তি ও গণমানুষের প্রক্ষে আমাদের দৃঢ় অবস্থান ঘোষণা করছি।

মূলনীতি:

১। জাতীয় স্বার্থের সর্বোচ্চ প্রধান্য।

২। শোষনহীন সমঅধিকার ভিত্তিক সমাজ।

৩। জনগণতন্ত্র।

৪। অসাম্প্রদায়িকতা ।

৫। স্বদেশী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ।

মত ও পথ:

ভূমিকাঃ বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডটি দীর্ঘ দুইশত বছরের উপনিবেশিক শাসনের অধীনতা থেকে পাকিস্তান নামক একটি কৃত্রিম রাষ্ট্রের অধীনে মুক্ত হয় ১৯৪৭ সালে। ব্রিটিশ সরকার তথাকথিত স্বাধীন পাকিস্তানের দায়িত্ব দিয়ে যায় উপনিবেশিক ভারতে উদ্ভুত ব্রিটিশ দালাল শ্রেণির শোষকদের হাতে। ফলে উপনিবেশকালীন সময়ে ভারতীয় উপমাহদেশে জনগণের যে ভয়াবহ দুরাবস্থা বিরাজমান ছিল, শাসকশ্রেণী তাতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আনেনি। সাবেক উপনিবেশিকতার বংশবদ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গভূমিকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামে এক নয়া উপনিবেশে পরিণত করে। অতঃপর এক দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ‘স্বাধীনতা’ লাভ করে। একটি জাতির জন্য স্বাধীনতা শব্দটির অর্থ ঐ জাতির আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার।

দৃশ্যত বাংলাদেশে এই অধিকার পেয়েছে বলে মনে হলেও তৃতীয় বিশ্বের অন্য সকল রাষ্ট্রের ন্যায় বাংলাদেশও নয়া উপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দ্বারা আক্রান্ত। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ও তার সহযোগী রাষ্ট্র সমূহ সমগ্র বিশ্বে পুঁজির মাধ্যমে এক ভয়াবহ আধিপত্য বিস্তার করছে, নিয়ন্ত্রন করছে তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলে স্বাধীনতার কোন সুফল জনসাধারন ভোগ করতে পারে না। যদিও তাদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল এই স্বাধীনতা। পাশাপাশি এই পরিস্থিতির ফলে জাতীয় অর্থনীতিও মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি।

স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বারবার সামরিক হস্তক্ষেপ, পেশী শক্তির প্রয়োগ, গণতন্ত্রহীনতা দুর্নীতি এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক দল সমূহের স্বদেশী মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও সদিচ্ছার, অভাবে বাংলাদেশ আজও তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য পশ্চাদপদতা, সাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্রহীনতা।

এই প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রস্তাবনা ও মূলনীতি সমূহকে ভিত্তি করে মৌলিক বাংলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘোষিত হচ্ছে :

১। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা করা।

২। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা।

৩। যে কোন পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া।

৪। সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সকল নাগরিকের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি নিশ্চিত করা।

৫। (ক) প্রতিটি নাগরিকের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার পূরণ, গণতন্ত্রায়ণ এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের সুস্থ বিকাশ নিশ্চত করা।

(খ) গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সমূহের সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

(গ) রাষ্ট্র পরিচালনার সকল স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং শক্তিশালী ও কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

(ঘ) গণমুখী ও জবাবদিহীতামূলক প্রশাসন তৈরি করা। প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ করা।

৬। ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বাকস্বাধীনতা, মতামত প্রদানের অধিকার, মানবিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করা।

৭। বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে একটি রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করা।

৮। (ক) বিদেশী বিনিয়োগের উপর নির্ভরতা কমিয়ে জাতীয় পুঁজির বিকাশ ও একে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিনত করা।

(খ) জাতীয় পুঁজির বিকাশকে প্রধানতম শর্ত বিবেচনা করে দীর্ঘ মেয়াদী শিল্পনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

(গ) জাতীয় পুঁজি ও শিল্পের দ্রুত বিকাশের লক্ষ্যে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবী শ্রমবাহিনী গঠন করা।

(ঘ) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কলকারখানার সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা।

(ঙ) দেশীয় উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা করা।

(চ) সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা।

(ছ) প্রয়োজন মোতাবেক শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করা।

(জ) শ্রমিক বান্ধব শ্রমনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

৯। (ক) একক সাধারন পরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার, উন্নতি সাধন ও আইল ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা।

(খ) কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ উন্নয়ন ও ব্যবহার নিশ্চিত করা।

(গ) কৃষিকে শিল্পে রূপান্তর করা এবং কৃষি ভিত্তিক গবেষণা প্রকল্পে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা এবং ফলাফল সমূহকে ব্যাপক ভিত্তিক প্রয়োগ করা।

(ঘ) পাট সহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় কৃষিখাত সমূহকে পুনরুজ্জীবিত করে অর্থকরী ও রপ্তানীমুখী করে গড়ে তোলা।

১০। (ক) শতভাগ জনগণের খাদ্যে সমান অংশীদারিত্ব ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

(খ) খাদ্য শস্যের ব্যাপক উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা এবং উদ্বৃত্তির ক্ষেত্রে রপ্তানীমুখী অবস্থান গ্রহণ করা।

(গ) দরিদ্র জনগণের জন্য রেশনিং এর মাধ্যমে বিনামূল্যে ন্যূনতম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা।

১১। (ক) প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমমান সম্পন্ন, একমুখী, শিল্পোৎপাদন সংযুক্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এবং স্বদেশী মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

(খ) প্রতিটি নাগরিকের স্ব-স্ব মাতৃভাষার শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করা।

১২। (ক) রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মানুষের জন্য যে কোন অবস্থার ভিত্তিতে বিনা মূল্যে সমমান সম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

(খ) চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা ও চিকিৎসার সরঞ্জামাদির দেশীয় উৎপাদনে পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রায়ত্ত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শিল্পকারখানা স্থাপন করা।

১৩। (ক) প্রতিটি নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীন আইনি সুবিধা নিশ্চিত করা।

(খ) বিচার প্রক্রিয়াটি ন্যায় ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য স্বচ্ছ ও সমভাবে সম্পন্ন করা।

(গ) উপনিবেশিক আইন সমূহের আমূল সংস্কার করা।

(ঘ) গণমুখী আইন প্রণয়ন করা।

১৪। (ক) মৃতপ্রায় নদী ও নদীভিত্তিক অর্থনীতিকে পুন:প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘ মেয়াদী ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি সম্পন্ন নদীনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

(খ) উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নদী কমিশন ও নদী মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা।

১৫। (ক) গৃহহীন নাগরিকদের জন্যে বিনামূল্যে ন্যূনতম আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

(খ) বস্তি ব্যবস্থা উচ্ছেদ করা।

১৬। হতদরিদ্রের জন্য বিনামূল্যে ন্যূনতম বস্ত্রের নিশ্চয়তা প্রদান করা।

১৭। (ক) পরিবহন খাতকে শতভাগ গণমুখী করে প্রতিটি নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীন গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

(খ) যোগাযোগ অবকাঠামোর সর্বোচ্চ আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

১৮। (ক) উচ্চমাত্রায় ক্রমবর্ধমান বা ক্রমবিভক্ত হারে আয়কর ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

(খ) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে প্রয়োজন অনুযায়ী ভতুর্কি প্রদান করা।

১৯। (ক) জাতীয় ব্যবহার্য প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা।

(খ) বনজ সম্পদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং বিদ্যমান বনসমূহকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংরক্ষন করা।

(গ) জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকি মোকাবেলায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্যদিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।

২০। (ক) স্বদেশী সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা এবং এর সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(খ) সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করা।

(গ) মানুষের সুস্থ বিকাশের ক্ষেত্রে যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার বিলোপ সাধন করা।

(ঘ) সামাজিক অবক্ষয় ও মাদকাসক্তি নির্মূলের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

২১। সকল প্রকার দুর্নীতি প্রতিরোধ করা।

২২। বৃটিশ ডিভাইড এ্যান্ড রুল নীতি, শোষণ, সাম্প্রদায়িক শিক্ষা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট যে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ নির্মূল করা।

২৩। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সুষম বণ্টনের মাধ্যমে শহর ও গ্রামে ভারসাম্য রক্ষা করা।

২৪। (ক) পিছিয়ে পড়া সকল জনগোষ্ঠীকে ( যেমন: নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী প্রভৃতি) সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করা।

(খ) বেকার ও প্রবীণদের জন্য বিশেষ ভাতা নিশ্চিত করা।

২৫। একক সাধারন পরিকল্পনা গ্রহণ পূর্বক বাংলাদেশকে একটি পর্যটন বান্ধব রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা।

২৬। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রসরতার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহন করা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের আধুনিকায়ন ও গবেষনা প্রকল্পে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা।

২৭। প্রজা শব্দটি সামন্ততন্ত্র ও উপনিবেশিকতার ধারক বিধায় রাষ্ট্রের সরকারী নামে প্রজা শব্দটির বিলুপ্তি সাধন আবশ্যক। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নাম হবে ‘জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’।

২৮। দূর্যোগকালীন সময়ে সামর্থের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা।

২৯। (ক) স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও বিশ্বশান্তি রক্ষার লক্ষ্যে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করা।

(খ) দেশের প্রতিটি সক্ষম নাগরিকের জন্য আধাসামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা।

৩০। (ক) আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে সকল রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক ও সহযোগীতামূলক সম্পর্ক তৈরি ও রক্ষা করা।

(খ) আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারনবাদ, নয়া উপনিবেশিকতা এবং তাদের দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করে বিজয় অর্জন আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

(গ) শোষিত ও নিপিড়ীতের আন্তর্জাতিকতায় বিশ্বাস ধারণ এবং সে অনুযায়ী কর্মসূচী গ্রহন করা।

৩১। শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক মৌলিক বাংলার কার্যকরী কমিটিতে থাকবে।

(ক) দ্বৈত নাগরিক কমিটির জন্য গ্রহনযোগ্য নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দেশের নাগরিক কার্যকরী কমিটির সদস্য হতে পারবে না।

(খ) ভবিষ্যত প্রজন্ম (ছেলে/মেয়ে/নাতি/নাতনী) দ্বৈত নাগরিক হলে, কার্যকরী কমিটি থেকে তাকে বাতিল ঘোষণা করা হবে।

(গ) বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের নাগরিক( বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী) মৌলিক বাংলা’র কার্যকরী কমিটিতে থাকতে পারবে।

(ঘ) মৌলিক বাংলার কোন ছাত্র সংগঠন থাকবে না এবং বাংলাদেশের যেকোন পেশার নাগরিক রাজনৈতিক যোগ্যতায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান লাভ করতে পারবে।

(ঙ) যেকোন বাংলাদেশী প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিক মৌলিক বাংলার সদস্যপদ গ্রহন করতে পারবে।

(চ) ইউনিয়ন এবং উপজেলা/থানার সদস্যপদ দ্বৈত ভোট (ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তি) দিয়ে উপজেলা কমিটি গঠন করবে।

(ছ) উপজেলার কার্যকারী সদস্য (দ্বৈত ভোটে) জেলা কমিটি নির্বাচন হবে।

১) জেলার কার্যকরি কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্যদের দ্বৈত ভোটে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হবে।

২) বাংলাদেশের যেকোন অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম পরিচালনায় অংশগ্রহন করতে পারবে।

৩) ইউনিয়ন, উপজেলা/থানা, জেলা, কেন্দ্রসহ সকল কমিটিতে ৩৩% নারী সদস্য যুক্ত করতে হবে।

৩২। কার্যকরী কমিটি বিষয়ক:

(ক)  ঘোষিত কার্যকরী কমিটির অন্তত অর্ধেকের বেশি সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটি যে কোন কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারবে।

(খ)  গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে মৌলিক বাংলার কার্যকরী কমিটি গঠন হবে।

(গ)  মৌলিক বাংলা’র কমিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক সদস্য দুইটি ভোট প্রদানের অধিকার পাবে। ভোট দুটি ভিন্ন দুই জন প্রার্থীকে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম ভোট এবং দ্বিতীয় ভোট হিসাবে ভোটদ্বয় চিহ্নিত হবে এবং প্রথম ভোট দ্বিতীয় ভোটের তুলনায় মূল্যবান হবে।

৩৩। (ক) স্বদেশী বোধসম্পন্ন, সৃজনশীল ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণধর্মী সাহিত্যই হবে ‘মৌলিক বাংলার’ সাহিত্য।

(খ) চলচ্চিত্র শিল্পের আধুনিকায়ন ও গুণগত মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা।

(গ) যে কোন স্বদেশী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে পৃষ্ঠপোষকতা করা।

সর্বপরি বাংলাদেশকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিসত্বা ও রাষ্ট্রে পরিণত করাই ‘মৌলিক বাংলার’ চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত হবে।

৩৪। মৌলিক বাংলা’র ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও কোন ব্যবসায়ী সেল বা প্রতিষ্ঠান নেই।

৩৫। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীগণ স্থানীয় উপজেলা এবং জেলা কতৃক মনোনীত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটি রাষ্ট্রীয় এবং জনগনের সাথে সম্পর্ক বিবেচনা করে মনোনয়ন নিশ্চিত করবেন।

(ক) সংসদ সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সভাপতি মন্ডলির সদস্য, সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিব ও দপ্তর সম্পাদক এর সিদ্বান্ত মোতাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী নির্বাচন করা হইবে অথবা মনোনয়ন চুড়ান্ত বিষয়ে আলাদা কমিটি গঠন করা হবে।

কর্মসূচী গ্রহনের নীতিমালা ও রাজনৈতিক প্রস্তাবনা:

১। প্রস্তাবনা ও নীতিমালাসমূহের ভিত্তিতে সকল কর্মসূচী গ্রহন করা হবে।

২। প্রস্তাবনা ও নীতিমালা সমূহের সাথে সাংঘর্ষিক কোন কর্মসূচী গ্রহন করা যাবে না।

৩। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহন করা হবে।

(ক) দলীয় কাঠামো সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দপ্তর সম্পাদক ক্রম অনুসারে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে। এবং প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালনে অধিকার থাকবে।

(খ) কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা এবং উপজেলা কমিটি সময় ও পরিস্থির উপর নির্ভর করে সৃষ্ট সেল বা কমিটি গুলো কাজ করবে। রাজনৈতিক সৃষ্ট সময় এবং কার্যকরী মিটিংয়ের মাধ্যমে পরিবর্তনশীল।

(গ) কেন্দ্রের সাথে সম্পর্ক রেখে বা যোগাযোগ করে জেলা এবং উপজেলা কমিটির সংগঠক যেকোন কর্মসূচী গ্রহন করতে পারবে। অবশ্যই বাংলাদেশ ও জনগণের স্বার্থে হওয়া আবশ্যক।

৪। আপদকালীন অথবা পরিস্থিতি যে কোন রাজনৈতিক জোট গঠন অথবা মৈত্রী স্থাপন অথবা অভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রস্তাবনা ও মূলনীতি সমূহের ঐকমত্য প্রধানতম শর্ত বলে বিবেচিত হবে।

(ক) দেশ ও জনগণের স্বার্থে মৌলিক বাংলা যেকোন অবস্থায় তার কৌশল পরিবর্তন করতে পারবে। মৌলিক বাংলা এবং বাংলাদেশের মধ্যে দর্শনগত ভাবে বাংলাদেশ অগ্রগণ্য।

(খ) বর্হিশক্তি সাথে আঁতাত এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব বিরোধী যেকোন সদস্যের বিরুদ্ধে মৌলিক বাংলার কার্যকরী কমিটি যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

(গ) মৌলিক বাংলার কাঠামোগত সংকটে কার্যকরী কাঠামোগত সংগঠক আহ্বায়ক পদ গ্রহন করে দল পুনর্গঠনের পূর্ণ অধিকার রাখে।

(ঘ) মূলত বাংলাদেশের মৌলিক চরিত্রধারী ব্যক্তিত্ব মৌলিক বাংলার ধারক ও বাহক। তাই মৌলিক বাংলার সংগঠকদের সিধান্তকে চুড়ান্ত বলে আপদকালীন সময়ে ধরা হবে।

৫। নির্বাচনী জোটের ক্ষেত্রে দলের নীতি নির্ধারনী পর্ষদ যৌক্তিক স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারবে।

(ক) কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনকালীন সময়ে ক্ষমতার বণ্ঠনে অংশীদারিত্ব সুত্র গ্রহন করতে পারে। কিন্তু এই অংশীদারিত্ব কেবল ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচিত হবে।

(খ) কেন্দ্রীয় কমিটির জাতীয় নির্বাচনের জন্য এবং স্থানীয় নির্বাচনের জন্য আলাদা কমিটি ঘোষণা করতে হবে। এক্ষেত্রে মৌলিক বাংলার সাথে জোটদল, বন্ধুপ্রতীম দল, ও সংগঠক ব্যক্তিবর্গ নির্বাচনকালীন কমিটির উপদেষ্টা বা সদস্য থাকতে পারবে।

 

সমাপনী বক্তব্য :

বাংলাদেশের সকল জণসাধারনকে ‘মৌলিক বাংলার’ সাথে একাত্মতা পোষণ করে বাংলাদেশকে একটি জনগণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে আহ্বান জানাচ্ছি।